নির্দেশকের কথা
কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান এর লেখা আমার ভাল লাগে। পশ্চিমের মেঘে সোনার সিংহ ছোট গল্পের বইটি একসময় আমি খুব পড়তাম। সেই বইয়ের ছোট গল্পগুলোকে নিয়ে সাজিয়েছি অনেক নাটকের কর্মশালা। ইমাম বক্সের সার্কাস গল্পটি মঞ্চে আনার অনেকদিনের সাধ ছিল। হয়নি। তারপর বটতলার পঞ্চম প্রযোজনা দ্য ট্রায়াল অফ মাল্লাম ইলিয়ার মহড়ায় পড়েছি ক্রাচের কর্নেল -রাজনীতির কূটকৌশল, হত্যা, ক্যু’র রাজনীতি বোঝার জন্য। উপন্যাসটি পড়ে অনেক লোভ হয়। এই রকম বৃহৎ ক্যানভাস কিভাবে মঞ্চে আসবে? বাংলাদেশের রাজনীতির পরিচিত মুখগুলোর মুখোশ কিভাবে উৎপাটন হবে? রাজনীতির ইতিহাস বড় গোলমেলে। একেক জন একেকভাবে গল্প-ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দাঁড় করায়। ইতিহাসের সাথে যারা প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত, তাদের বয়ানও গোলমেলে ঠেকে বর্তমান বাস্তবতায় রাজনীতিতে নতুন ভূমিকার প্রেক্ষাপটে। সাহসী মানুষ যে শত বিপদে নিজের মত ও সত্যে থাকেন নির্ভীক, সেই রকম রাজনীতির মানুষ এই দেশে বিরল। বঙ্গবন্ধুর মত নির্ভীক ও সত্যবাদী রাজনীতিক এই দেশের মানুষ আর কোনদিন পাবে না। মৃত্যুর সামনেও সহজে টলেননি, থেকেছেন সাহসের দৃপ্ততা নিয়ে। তাহেরও তেমনি এক নির্ভীক মানুষ। নিজের দৃঢ় মনবলে পথ চলেছেন, মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। বর্তমান রাজনীতিতে সিলিকন মেরুদ-ের মানুষের আধিক্য। সৎ সাহস নিয়ে কথা বলার, মতামত প্রকাশের মানুষ নেই। পৃথিবীর সব বিপ্লবীদের মত তাহের আমাদের দীক্ষা দেন নির্ভীক হবার সত্য বলার, মৃত্যুতে টলে না যে বীর। বটতলা’র সবাই অনেক আগ্রহ ও ভালবাসা নিয়ে ব্রতী হয়েছেন ইতিহাসের গহ্বর উন্মুক্ত করতে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে সামিনা লুৎফা নিত্রা, কাজী রোকসানা রুমা ও ইমরান খান মুন্নার আন্তরিক সাহায্য ছাড়া এ দুরূহ নাটক মঞ্চের আলো দেখত না। তাদের প্রতি আমার অশেষ ভালবাসা-কৃতজ্ঞতা। ক্রাচের কর্নেল নতুন ভাবনা, নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করবে এবং তা খ-ন করবে পরবর্তী প্রজন্ম এই আশাই পরিশেষে বটতলার সবার।
মোহাম্মদ আলী হায়দার
