নাট্যকারের কথা
জন্ম সত্য মৃত্যু জীবন লক্ষ্য পথ। সব পথ মত যা থেকে সত্য মিথ্যার যে কোথাও পৌঁছানো যায়, সকলি আরাধ্য হয়- যদি গাই গান মানবের। একবিংশ শতকের একেবারে গোড়ার বছরটি থেকে খনার সাথে বসবাস। বারাসাত, হাড়োয়া, বেঁড়াচাপা, জীবনপুরের পথে পথে ঘুরে চন্দ্রকেতু গড় আর খনা মিহিরের ঢিবি হাতড়ে শুরু। আরও বছর দুই বয়ে বেড়ানোর পর ভাবনার স্ফুরণ। কোন ভাষায় করবো রচনা এ কিংবদন্তী? খনা-মিহির-বরাহ তাদের বাস কোন যুগে? বিক্রমাদিত্যের রাজসভা নাকি চন্দ্রকেতুর পিতামহ ধর্মকেতুর রাজজ্যোতিষী এ ত্রয়ী? কিংবদন্তীর কোন অভাব নেই, নেই অভাব পরস্পরবিরোধী মতেরও। অতল সমুদ্র মন্থনে হাতে যা ঠেকে তা অমৃত কিনা সে সংশয়ের সীমানা মনের আড়াল হয় না। ২০০৮ নাগাদ নানান খামতি নিয়েই তাই শেষ হয় খনা নামের মঞ্চনাটকের পান্ডুলিপি। প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারী ২০১০ এর একুশের বইমেলায় ‘যুক্ত’ থেকে। তারপর বিপ্লবী নারী সংহতির ডাক উপেক্ষা করতে পারেনি বটতলা। তাদের দাবী, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শতবর্ষ পূর্তি আর মঞ্চ হিসেবে শহীদ মিনার প্রাপ্তি সব মিলে খনা’র নবযাত্রার উন্মোচন ৯ মার্চ, ২০১০। বাংলার প্রাণের জ্ঞানভাষ্যকে নিয়ে আধিপত্য, পুরুষতন্ত্র আর শোষনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সূচনা’র এর চেয়ে ভালো কোন মঞ্চ কি হতে পারতো?
‘বতলা’ নতুন দল। প্রাণের উচ্ছাস আমাদের সাহসের মূল। আমাদের মন্ত্র: গহনে প্রবিষ্ট মূল, পল্লবিত আসমানে। খনা’র নাট্যভাষা দুরূহ। সেই আয়াসসাধ্য নাটককে বটতলা প্রণের গানে যুক্ত করেছে। সে সাহসে সাহস মিলিয়ে আমিও নেমেছি পথে- মিছে যারে ভাবি পথ চলা। ঋণ স্বীকারে ড. আলী নওয়াজের ‘খনার বচন, কৃষি ও বাঙ্গলী সংস্কৃতি’ আর এনামুল হকের ‘Chandraketugarh’ ই একমাত্র নয়। আরও বহু জন, বহু লেখা বহু তারা খসা, বঙ্গোপসাগরে গড়ানো বহু বছরের জল। ঋণী সকলের কাছে। আর অপরিসীম ঋণ বটতলা’র বন্ধুদের কাছে। ঋণী নির্দেশক মোহাম্মদ আলী হায়দারের কাছে যিনি খনাকে দেখেছেন এমন রূপে, যা অনন্যরূপে অন্যতর আমার দেখা থেকে। জয়তু হে তরুণ প্রাণ। জয় হোক তব নাট্যসৃজন ছন্দের।
