৫ ডিসেম্বর ২০১৬ সোমবার | সন্ধ্যা ৭টা | ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তন, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি
শেক্সপিয়ার-এর ওথেলো অনুপ্রেরণায়
নাটক ও নির্দেশনা: অর্ণ মুখোপাধ্যায়
দল: নটধা (হাওড়া, ভারত)
নাটক কাহিনী:
গপ্পোটি দুই বন্ধুর। অনগ্র ও অথৈ। অনগ্র’র বাবা ভীনসুরার ‘দেবতা’ ব্রতনাথ চট্টোপাধ্যায়। ওর বাবার জমিতে অথৈ’র এর মা জন খাটত। সান স্ট্রোক হয়ে মারা যেতে ব্রতনাথ লোধা সন্তান অথৈকে এনে তোলেন নিজের বাড়িতে। অথৈ’র দিদিমাকে ওপারের কুলীনরা ডাইনি সন্দেহে পুরিয়ে মেরেছিল। তাই নিজের জাতকে সম্মান দেওয়ানোটা যেন ছিল অথৈ এর রক্তের গভীরে।
অনগ্র’র পরা জামা পরে, এঁটো খাবার খেয়ে দিব্যি যাচ্ছিল দিন। হঠাৎই অনগ্রৎর মা মারা যান। সেই সময় অথৈ ওকে আগলে রাখত বটে। তবে অনগ্র’র মন ঘুরতে শুরু করে। সে ভাবতে আরম্ভ করে অথৈ’র জন্যই ওর মা মারা গেছে। ধীরে ধীরে স্কুলে প্রথম হতে লাগলো অথৈ ও অনগ্র দ্বিতীয়। মনের ভিতর কেমন একটা বিষ মিশতে শুরু হল সেই থেকেই…
এরপর অনেক দিন কেটে গেছে। অথৈ ও অনগ্র এখন ডাক্তার। অথৈ পড়া শেষে গ্রামে এসেছে। স্বপ্ন একটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা। সামিল ব্রতনাথও। মৃতা স্ত্রীর নামেই তিনি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুলতে চান। অথৈ ও অনগ্র’র কলকাতার মেডিকেল কলেজের সার বিভস্বান মুখাজ্জির মেয়ে দিয়ামনাও এসেছে এই ভীনসুরাতেই। কারণ সে অথৈতে ও তার এই স্বপ্নে মশগুল। বিলেত থেকে ক’দিনের জন্য গ্রামে আসা অনগ্র এটা সহ্য করতে পারে না। তার মনে হয় একটা খেলা খেলবে যে খেলায় অথৈ হারবে আর ও জিতবে… হয়ত এই প্রথমবার।
পরিকল্পনা মত অনগ্র গ্রামের এক উঠতি হিরো এলাকার দাদা ভাই রাদুকে ধরে কারণ এই একমাত্র ভিনসুরাবাসী যে অথৈকে পছন্দ করে না। রাদুকে অনগ্র বোঝায় যে সে যদি ওর কথামত চলে তবে দিয়াকে পাবার ব্যবস্থা করে দেবে। রাদুকে ধরে অনগ্র একটা পরিকল্পনা করে। অথৈ-এর খুব কাছের একটি ছেলে, যে আবার ওর কম্পাউন্ডারও, মুকুলকে মদ খাওয়ায় অনগ্র নানা অছিলায় উৎসবের নামে। অনুগ্র জানে যে অথৈ মদ ব্যাপারটা একেবারে মেনে নেয় না। মদ্যপ মুকুলের সাথে ছদ্ম বিতন্ডায় জড়ায় রাদু। অথৈকে সেটা দেখায় অনগ্র। প্রচন্ড রাগে অথৈ মুকুলকে বলে ওর সাথে আর সম্পর্ক না রাখতে। এদিকে অনগ্র আভাষে ইঙ্গিতে অথৈকে বোঝাতে থাকে যে দিয়া মুকুলকে ভালোবাসে।
মুকুল দিয়াকে বলে যে ও এই ভুল করে অনুতপ্ত। দিয়া বলে যে সে অথৈকে বলবে মুকুলকে আবার কাজে ফিরিয়ে নিতে। প্রতিশ্রæতি মতো দিয়া অথৈকে বারবার বলে মুকুলকে ফেরাবার কথা। অনগ্র এই সুযোগের পূর্ণ সদ্বব্যবহার করে অথৈ’র মনটা মুকুল ও দিয়ার বীরুধে বিষোতে।
অথৈ এর বিশ্বাস পেতে অনগ্র মুকুলের বোন মিলি, যে ওকে ভালবাসে অন্ধের মত। তাকে দিয়ে অথৈ’র মা’র হাতে তৈরি একটা রুমাল ওদের বাড়ী থেকে চুরি করতে বাধ্য করে। এই রুমালটি অথৈ বিয়ের দিন দিয়াকে দিয়েছিল মার স্মৃতিচিহ্ন রূপে। মিলি অনগ্রৎর প্রতি ভালোবাসায় কোনোদিক না ভেবে রুমালটি অনগ্রকে দেয়। অনগ্র এই রুমালটি দেয় পিঙ্কিকে। পিঙ্কি পেশায় বারবণিতা মুকুল তাকে ভালোবাসে। পিঙ্কি সেই রুমালটি মুকুলকে দেয়।
এদিক অনগ্র বলে যে দিয়া মুকুলকে দিয়েছে ওদের ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে। এক সময় মুকুলের হাত থেকে সেই রুমাল অনগ্র অথৈকে দেখায়। অথৈ ভাবে সত্যি দিয়া দিয়ে দিয়েছে। আসলটা হল পিঙ্কি দিয়েছে মুকুলকে। অথৈ’র মনে হতে থাকে যে কুলিনদের হাতে বরাবরের মতো আবার ওর জাত ঠকে গেল? ওর সব গুলিয়ে যায়। ওর মনে হয় সব মিথ্যে। ও কি এক অন্ধতায় দিয়াকে খুন করে বসে।
মর্মান্তিক এই মৃত্যুর পর অথৈ সবার থেকে সত্যিটা জানে। এবার ও নিজেকে শেষ করে দেয়। ভিনসুরার আকাশ আর্তনাদ করে ওঠে।
মঞ্চে
অনুগ্র: অনির্বাণ ভট্টাচার্য
দিয়ামনা: ত‚র্ণা দাশ
ব্রতনাথ: সুবির গোস্বামী
মিলি: উপাবেলা পাল
মকুল: অর্পন ঘোষাল
রাদু: সুমিত পাঁজা
বিভস্ব্যান: জয়দেব ঘোষ
বিক্রমলাল: জ্যোতির্ময় পন্ডিত
অথৈ: অর্ণ মুখোপাধ্যায়
ভীনসুরাবাসী: সার্থক আশ, সৌরভ সামন্ত, সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা রায়
মন্টু: মিলন কুন্ডু
পুলকেশ: রুদ্ররূপ মুখোপাধ্যায়
মানা: তনুজা দে
পিস্কি: স্বাগতা রীত
নেপথ্যে
মিলন কুন্ডু, সুমিত পাঁজা, সুবল মাইতি, কল্যাণ ঘোষ, বন্দন মিশ্র, সার্থক আশ, সুব্রত চট্টোপাধ্যাায়, বীমল মাইতি,
ব্যবস্থাপনায়: সাধনা মুখোপাধ্যায়
নাটক, সঙ্গীত ও নির্দেশনা: অর্ণ মুখোপাধ্যায়